বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫
ProdhanKhabor | Popular NewsPaper of Bangladesh
বৃহস্পতিবার ১৪ অগাস্ট ২০২৫ ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
আসন্ন ঢাকসু নির্বাচনে সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন দাউদকান্দির সন্তান সুফি আহমেদ এখানে নীল জলরাশির সাথে মেঘেরা আলিঙ্গন করে দাউদকান্দিতে গাছের চারা পেলো ৫০০ শিক্ষার্থী আসন পুর্নবহালের দাবীতে দাউদকান্দিতে খেলাফত মজলিসের মানববন্ধন যুবকরাই আমাদের শক্তি ও বিপ্লবের মহানায়ক: মনিরুজ্জামান বাহলুল নির্বাচন নিয়ে কোন ষড়যন্ত্র হতে দেয়া যাবে না: ড. খন্দকার মোশাররফ আমাদের নেতা তারেক রহমানকে এদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই: খন্দকার মারুফ দাউদকান্দিতে হেফাজতে ইসলামের জুলাই শীর্ষক আলোচনা সভা আর কোন নব্য ফ্যাসিবাদকে বাংলাদেশে জন্ম হতে দেয়া যাবে না: মনিরুজ্জামান বাহলুল দাউদকান্দিতে ভাষা সৈনিক ড. জসিম উদ্দিন আহমেদের স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জ বাজার ও কালাডুমুর নদীতে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খেলাফত মজলিসের ৬ দফা করণীয় ঘোষণা দেশে প্রথমবারের মতো স্বল্প খরচে নেটিভ এ্যাড প্ল্যাটফর্ম চালু করলো ফেইথ এন্ড ফেয়ার দাউদকান্দিতে খেলাফত মজলিস মনোনীত এমপি প্রার্থীর মোটর শোভাযাত্রা কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষায় অন্তুভূক্ত করার দাবীতে দাউদকান্দিতে মানববন্ধন দাউদকান্দিতে মরহুম ভিপি আব্দুস সাত্তারের রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া মাহফিল দাউদকান্দিতে জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা দিলো ছাত্র শিবির দাউদকান্দিতে ছাত্র অধিকার পরিষদের উদ্যোগে শিক্ষা উপকরন বিতরণ কুমিল্লা সমিতি ঢাকার সভাপতি ও সম্পাদককে মালয়েশিয়ায় উষ্ণ সংবর্ধনা সিঙ্গাপুরে সেরা রেমিটার্স সম্মাননায় ভূষিত হলেন হোল’ কর্পোরেশন”
মালদ্বীপ ভ্রমণ

এখানে নীল জলরাশির সাথে মেঘেরা আলিঙ্গন করে

এখানে নীল জলরাশির সাথে মেঘেরা আলিঙ্গন করে
মেঘের উপরে ভেসে ভেসে ছুঁটছে যান। এখনও আকাশে উড়ছে বিমান। রেডিও স্টেশন থেকে বার্তা এলো আর কিছুক্ষণ পরেই আমরা এয়ারপোর্টে নামবো। জানালার নিকটেই ছিলাম। কৌতুহলে উঁকি মেরে নিচে তাকাতেই চোখ ফেরানো দায়। নীল সাগরের বুকে বিচরণ করছে ছোট ছোট নৌযান। নীল পানির উপর সবুজ দ্বীপ গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

উপর থেকে দেখে মনে হচ্ছে, নীল আকাশ থেকে মেঘেরা দল বেধে ছুটছে। ওরা ছুঁটে চলছে নীল জলরাশির দিকে। যেন হাত বাড়িয়ে এগিয়ে চলছে, আর নীল জরাশিরা তাদের জড়িয়ে আলীঙ্গন করছে।

এদিকে বিশাল সাগরের নীল পানির ভাজে ভাজে দ্বীপ ও রংবেরংয়ের আধুনিক ক্রুজগুলো দেখেই যেন সকল ক্লান্তি নিমিষেই শেষ। অপেক্ষায় আছি কখন নীল পানিতে পা ভিজিয়ে শরীরটা শীতল করবো। প্রকৃতির এমন নৈসর্গিক দৃশ্য দেখে চোখ যেন শীতল হয়ে গেলো। দ্বীপপুঞ্জের দেশ মালদ্বীপ ঘুরে এসে লিখেছেন, শরীফ প্রধান।


মালদ্বীপ উদ্দেশ্যে রওনা: বুধবার (৩০ অক্টোবর ২০২৪) রাত বারটায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেক শ্রীলঙ্কান ফিট এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে মালদ্বীপের উদ্দেশ্যে রওনা করি। গভীর রাতে বিমানে চড়ার প্রথম অভিজ্ঞতা আমার। ভয় ভয় চোখে চুপচাপ বসে আছি। এটাই প্রথম আন্তর্জাতিক বিমান যাত্রা।

ভেবেছিলাম চলতি পথে বিমানের ভিতরে খুবই শৃঙ্খল শান্ত নিবিড় মনোরম পরিবেশ হবে। উঠার পর দেখি, বকবক, কাবঝাব, মোবাইলে কথা বলার শব্দ, বাচ্চাদের কান্নাকাটি, কেউ কেউ লাউড সাউন্ডে গান শোনছে, উচ্চ স্বরে কথা বলছে, হাসিঠাট্টা ইত্যাদি। আমি চুপচাপ। এযেন লোকাল বাস। রাত ২টার পর চেঁচামেচি একটু কমছে মনে হচ্ছে। কেউ কেউ আবার ঘুমিয়ে পরেছে। নাক ডাকার শব্দ শোনা যাচ্ছে। আমার চোখে ঘুম নেই। নিশি রাতের বিশাল আকাশের শূন্যে উড়ছে বিমান। আহ্ মহান আল্লাহর কি মহিমা, এসব ভাবতে ভাবতে রাত ৩টায় পৌছে যাই শ্রীলংকার কলম্বো বিমান বন্দরে।

সেখানে ৩ঘন্টা যাত্রা বিরতী। এয়ারপোটের সুবিশাল করিডোর, দোকান, রেস্টুরেন্ট ঘুরে ফিরে এবং বিভিন্ন দেশের পর্যটকের সাথে পরিচয় ও গল্প করে সময় পার করছি। ফজরের নামাজের সময় হয়েছে। এয়ারপোর্টে নামাজের স্থান রয়েছে। সেখানে নামাজ আদায় করি। ভোর সকাল। গড়ির কাটা ৬টার ঘরে।

ইমিগ্রেসনের কাজ শেষ করে বিমানে উঠে বসি। আমরা তখন শ্রীলঙ্কার কলম্বো আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে ফিট এয়ার লাইন্সের বিমানে মালদ্বীপে ইব্রাহিম নাসির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে ৬টা ৩০ মিনিটি ছেড়ে যায় বিমানটি। রাতের যাত্রায় কোন কিছু অবলোকন না করতে পারলেও দিনের যাত্রায় পুরোপুরি দেখছি আর হতবাক হচ্ছি।

এযেন আলিফ লায়লার সেই যায়নামাজ যেটার উপর দাড়িয়ে সিনবাদ আকাশে উড়েছে। আমি মনে হয় এমন যাদুর কোন বাহনে আছি। শূন্যে উড়ছে বাহনটি। আর চতুর্দিকে মেঘেরা এলো মেলো ছুটে চলছে। ভোরের স্নিগ্ধ হাওয়া না পেলেও দূর আকাশে ভোরের তাজা রোদের ঝিলমিল আলো ছোট জানালার কাচ ভেদ করে চোখে মুখে লাগছে।

শুভ্র সাদা মেঘগুলোকে নিচে ফেলে উপর দিয়ে চলছি আমরা। আহ্ কী দারুণ সৃস্টি। কেমন তার স্রষ্টা? ভাবতে ভাবতেই কল সেন্টার থেকে ভেসে আসে ঘোষণা। আমরা কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমান বন্দরে অবতারণ করতে যাচ্ছি। বিমান যত নিচে নামছে ততই যেন আকাশ আর সাগরের সৌন্দর্য ফুটে উঠছে। নীল আকাশের সাদা মেঘেরা নীল সাগরের পানে ছুঁটে চলছে। আহ্ কী দৃশ্য! অবশেষে সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে মালদ্বীপের ইব্রাহিম নাসির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌছে যাই।

মালদ্বীপ : মালদ্বীপ উত্তর-মধ্য ভারত মহাসাগরের একটি স্বাধীন দ্বীপ দেশ। যে দ্বীপগুলি দেশটি তৈরি করেছে তারা উত্তর থেকে দক্ষিণে ৫১০ মাইল (৮২০ কিমি) এবং পূর্ব থেকে পশ্চিমে ৮০ মাইল (১৩০ কিমি) এরও বেশি বিস্তৃত। সবচেয়ে উত্তরের প্রবালপ্রাচীরটি ভারতের মূল ভূখণ্ডের প্রায় ৩৭০ মাইল (৬০০ কিমি) দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত এবং কেন্দ্রীয় এলাকা মালে  (Male') এর রাজধানী দ্বীপসহ শ্রীলঙ্কার প্রায় ৪০০ মাইল (৬৪৫কিমি) দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ।

দেশটির মোট জনসংখ্যা: (২০২৪ অনুমান) ৫লাখ ৪৪ হাজার ৭শত। দেশটিতে বহুদলীয় প্রজাতন্ত্র একটি আইনসভা ঘরসহ (পিপলস মজলিস) রয়েছে, সরকারী ভাষা: দিভেহি (মালদ্বীপ), ধর্ম: ইসলাম, অফিসিয়াল নাম: দিভেহি রাজজেগে জুমহুরিয়া (মালদ্বীপ প্রজাতন্ত্র), আয়োতন (বর্গ কিমি): ২৯৮, দেশটির আর্থিক একককে রুফিয়া বা (আরএফ) বলা হয়। স্বাধিনতা লাভ: ১৭৯৬ সালে ব্রিটিশরা সিলন দখল করার পর, মালদ্বীপ একটি ব্রিটিশ আশ্রিত রাজ্যে পরিণত হয়। একটি মর্যাদা ১৮৮৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে রূপান্তরিত হয়।

১৯৬৫ সালে মালদ্বীপ ব্রিটিশদের কাছ থেকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্বাধীনতা লাভ করে এবং ১৯৬৮ সালে একটি নতুন প্রজাতন্ত্রের উদ্বোধন করা হয়। ব্রিটিশ গসৈন্যরা ২৯ মার্চ ১৯৭৬ সালে চলে যায় এবং এই দিনটি এখন মালদ্বীপের স্বাধীনতা দিবস হিসাবে পালিত হয়।

হিজাবী নারীর দেশ: বিমান থেকে নেমে ইমিগ্রেসনে যেতেই চোখ পড়ে ইমিগ্রেসন পুলিশের দিকে। সবগুলো কাউন্টারেই নারী পুলিশ সদস্যরা বসে আছে। প্রত্যেকের মাথায় হিজাব। এটা দেখে আমি চারিদিকে ভালো করে তাকালাম। দেখলাম সবার মাথায় হিজাব আছে। তবে, মুখ খোলা। কেউ কেউ ঠোটে লাল লিপিস্টিক দিয়েছে।

বেশিরভাগ অফিসারই যুবতী। সুন্দর করে কথা বলে হাসিমাখা মুখে। স্বাগত জানায়। কোন প্রশ্ন ছাড়াই আমাকে ইমিগ্রেসনের কাজ শেষ করলো। আমার ভালো লাগলো হিজাবী নারীদের আচরন। মনে মনে ভাবলাম হিজাবী নারীর দেশে আসলাম।

নীল পানির দেশে: এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেসনের কাজ শেষ করে আমরা যখন বের হলাম। চোখের সামনেই নীল পানিরা যেন আমাদেরকে ছল ছল করে স্বাগতম জানাচ্ছে। কী অসাধারণ দৃশ্য! নীল পানির মায়ায় যেন জড়িয়ে আলিঙ্গন করতে ইচ্ছে হচ্ছে। কাঠের তৈরী মাচার উপর দাড়িয়ে সাগরের নীল পানি দেখছি। বিমানবন্দর থেকে বাহির হলেই জেটি। সেখানে পর্যটকের জন্য অপেক্ষমাণ দারুণ দারুণ স্পিডবোর্ড।

স্কুটির শহর: বিমানবন্দর থেকে হাইজ গাড়ীতে আমরা হোটেলে যাওয়ার জন্য রওনা করেছি। গাড়ী একটু এগুতেই দেখি মাঠ ভরা সাড়ি সাড়ি স্কুটি পাকিং করা। বিষয়টি তখনও বুঝতে পারিনি। পরে দেখী সড়কে প্রচুর স্কুটি চলছে। নারী-পুরুষ, ছেলে মেয়ে স্কুটি চালাচ্ছে। পরে খবর নিয়ে জানতে পারি। এই শহরের স্থানীয় বাসিন্দাসহ অনেকেই স্কুটি চালায়। প্রত্যেকেরই স্কুটি রয়েছে। অনেকের আবার ২/৩টিও আছে। শহরের অলিগলি যেন স্কুটিতে ভরপুর।

যে শহরে হর্ন বাজেনা: এই শহরে যেমন স্কুটি চলে তেমনি প্রাইভেট গাড়ীর কমতি নেই। পুরো শহর জুড়ে বাস সার্ভিসও রয়েছে। এতো স্কুটি এতো এতো প্রাইভেটকার কিন্তু কোন হর্ন নেই। গাড়ীর হর্নে বিরক্ত হতে হচ্ছে না পর্যটকদের। এরা শব্দ দূষন মুক্ত রেখেছে এদের শহরকে। খুব বেশি জামেলা না হলে চালকরা হর্ন বাজায় না। তাই সড়কের পাশ দিয়ে আরামে হাটাচলা করা যায়। একদিন আমি বেখেয়ালিভাবে সড়কে দাড়িয়ে আছি।

পেছনে তাকিয়ে দেখি গাড়ী আমার পিছনে দাড়িয়ে আছে। অথাৎ সে আমি যাওয়ার অপেক্ষা করছে। তারপরেও হর্ন বাজাননি। সড়কে গাড়ী থেমে যায়: আমাদের দেশে যখন রাস্তা পার হই। তখন দাড়িয়ে থাকি কিংবা দৌড়ে চলে যাই। মজার বিষয় হলো এখানে পুরাই উল্টো। আপনি সড়কে পা রাখছেনতো গাড়ী দাড়িয়ে যাবে। একদিন আমি দৌড়ে সড়ক পাড়ি দিচ্ছি। তখন দেখলাম গাড়ী দাড়িয়ে আছে। আমিতো অবাক এরপর থেকে যতবার আমি রাস্তা পার হয়েছি ততবার হেঁটে হেঁটে গিয়েছি।

একবার আমি রাস্তা পার হবার উদ্দেশ্যে সড়কের পাশেই দাড়িয়ে আছি, ভাবছি যাবো কি যাবো না। তখন আমার অনুভূতি বুঝতে পেরে চালক গাড়ী থামিয়ে আমাকে ইশারায় বলছে, যেন রাস্তা পার হই। তাই বলা চলে এই শহরের সড়কে গাড়ী থেমে যাই।

পর্যটক নগরী: বিমান থেকে নামার পর থেকেই বিভিন্ন দেশের পর্যটক দেখতে পাই। এই শহরের অলিতে গলিতে পর্যটকে ভরপুর। এখানকার বীচগুলো যেন পর্যটকদের মিলন মেলায় পরিনত হয়। আমি অনেক দেশের পর্যটকের সাথে কথা বলেছি, যেমন: ফ্রান্স, জার্মান, স্পেন, লন্ডন, আর্জেন্টিনা, আমেরিকা, ইন্ডিয়া, ইতালীসহ আরো অনেক । মূলত পর্যটনকে ঘিরেই এই দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি।

সুরম্য মাসজিদ: মালদ্বীপের প্রধান দুটি বড় শহর। একটি মালে শহর (ক্যাপিটল সিটি) অপরটি হুলে মালে (নতুন মালে শহর বা ফেইস ওয়ান), পাশেই ফেইস টু শহর। এই শহড়গুলোকে আরো বেশি সৌন্দর্য মন্ডিত করেছে। সুরম্য, আধুনিক স্থাপত্যের নিমানশৈলীতে অনন্য সৌন্দর্যের বড় বড় মসজিদ। মসজিদগুলো দেখলে যে কারো নয়ন জুড়িয়ে যাবে। বিশেষ করে সাগর পাড়ের সালমান মসজিদ, সেন্ট্রাল মসজিদসহ আরো অনেক মসজিদ রয়েছে মালদ্বীপে।

প্রতিটি মসজিদেই নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা দেখে পর্যটকরা আকৃষ্ট হচ্ছে। প্রতিটি মসজিদে নারী-পুরুষের নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। তাছাড়াও পরিচ্ছন্ন ওজু খানা, শৌচাগার। জুতা রাখার জন্য কাঠের তৈরী আলমিরা। সবকিছু যেন গুছানো পরিপাটি। মসজিদগুলোতে একাধিক কক্ষ রয়েছে। প্রতিটি কক্ষে আরামদায়ক কার্পেট বিছানো। ঈমাম সাহেবের খুতবার মিমবারটির কাঠের তৈরী কারুকাজে ভরপুর ও বেশ উঁচু।

পনেরো রুপির শহর: মালদ্বীপের প্রধান শহর থেকে একটি মাত্র বাস সার্ভিস চলাচল করে। দোতালা বিশিষ্ট বাসটি দিয়ে পুরো শহর ঘুরা যায়। অল্পগতি সম্পন্ন বাসটি দিয়ে যাতায়াত করলে পুরো মালে শহরের সৌন্দর্য অবলোকন করা যায়। শহরের প্রধান সড়ক দিয়ে বাসটি চলাচল করে। কার্ডে অথবা রুপিতে টিকেট কেটে এটা দিয়ে চরা যায়। স্থানীয়রা বেশিরভাগ এই পরিবহনটি ব্যবহার করে। আমরা ফেইস টু শহরের কাউন্টার থেকে ১৫ রুপি দিয়ে টিকেট কেটে বাস উঠি। বাসটি ফেইস টু, ফেইস ওয়ান হয়ে ক্যাপিটাল সিটির হাসপাতাল স্টেশনে আসলে নেমে পড়ি। অথাৎ ১৫ রুপি দিয়ে টিকেট কেটে পুরো শহর দেখতে পাবেন। তাই এটাকে ১৫ রুপির শহর বলা চলে।

অশ্লীলতা দেখিনি শহর ও বীচে: মালদ্বীপ পুরোটাই সাগরের উপর। তারপরেও মালে শহর যেহেতু রাজধানী প্রচুর মানুষের আনাগোনা ব্যস্ততায় পূর্ণ থাকে সবসময়। এদিকে হুলে মালে শহরটি গড়ে তুলা হয়েছে বীচে। তাই এখানে আবাসিক হোটেল বেশী। অধিকাংশ পর্যটক রাত্রী যাপন করে এ শহরেই। দেশে থেকে যেমনটি শোনেছি মালদ্বীপ মানে অশ্লীল বা অ্যালকোহল নগড়ী। অথচ সেখানে ঘুরে দেখলাম। এসবের কোন বালাই নেই।

অ্যালকোহলতো দূরের কথা ঘাঁ ঘেঁষাঘেঁষি করে বসতেও তেমন কাওকে দেখিনি। আমি গভীর রাতে হাটতে বের হয়েছি। বীচ দিয়ে হাঁটছি। কিন্তু কোন রকম অশ্লীলতা দেখিনি। বীচে রাকা টেবিলগুলোতে সামনা সামনি হয়ে বসে কেউ গল্প করছে। কেউ জুস খাচ্ছে। এভাবেই কাটছে তাদের সময়। যেমনটা আমাদের কক্সবাজার সন্ধ্যা আর সকাল কী? বীচে খাটে বসতে পারলেই বেস। নির্লজ্জতা ছাপিয়ে যায়। তারচেয়ে শতগুণ ভালো পর্যটন দেশ মালদ্বীপ।

পরিচ্ছন্ন শহর : শহরের প্রতিটি পথ ঘাট যেন ঝকঝক করে। কোন ময়লা আবর্জনা ধুলাবালি নেই। সড়কের পাশে প্লাস্টিকের বোতল কিংবা পলিথিন পরে থাকতে দেখা যায়নি। প্রতিটি পয়েন্টে পয়েন্ট ডাস্টবিন বসানো। বীচ গুলোও পরিচ্ছন্ন। সড়কে চলার পথে, যেথা সেথায় থুতু ফেলতেও আপনি ইতস্তবোদ করবেন।

পোর্ট বা বন্দর নগরী: শহরের যেদিকে যাবেন একটানা একটা পোর্ট পাবেন। চারিদেকই পোর্টে ঘেরা এই শহর। পোর্টগুলোতে চমৎকার চমৎকার স্পীড বোর্ড, মাছ ধরার নৌকা ও ছোট বড় ক্রুজ বেঁধে রাখা হয়েছে। এসকল একেকটি পোর্ট থেকে একেকটি আইল্যান্ড যেতে হয়। আপনি যে আইল্যান্ড যাবেন সেই পোর্টে যেতে হবে। না হয় আপনাকে ঘুরতে হবে এবং বাড়তি টাকা খরচ হবে। তাই এটাকে পোর্ট নগরী বললেও ভুল হবে না।

দ্বীপ আর রিসোটের দেশ: ভারত সাগর ঘেরা মালদ্বীপে কয়েক শতাধিক দ্বীপ রয়েছে। বেশ কিছু দ্বীপে যে কেউ যেতে পারলেও। রিসোটে যেতে আগেই বুকিং দিতে হয় এবং গুনতে হয় মোটা অংক। বেশিরভাগ বিদেশী পর্যটক এসকল দ্বীপ ও রিসোর্ট রাত্রী যাপন করে। সাগরের বুকে গড়ে তুলা রিসোটগুলো খুবই জাঁকজমক পূর্ণ।

ট্যানজিট বীচ মাফুসি আইল্যান্ড : যতগুলো দ্বীপ নিয়ে মালদ্বীপ গঠিত তার অন্যতম একটি মাফুসি আইল্যান্ড। বর্তমানে বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণের প্রথমস্থানে আছে এই দ্বীপটি। মালে শহর থেকে ২৫ ডলারের মাধ্যমে দ্রুতগামী স্পিট বোর্ডে সাগর পাড়ি দিয়ে, মাফুসি আইল্যান্ডে যেতে সময় লাগে ৩০-৪০ মিনিট। সেখানে যাওয়ার পর আপনার ভালোলাগায় ভিন্নতা আসবে।

সানসেট বীচ, নারিকেল তলা, হোটেল, সাতার কাটা, বিদেশী পর্যটক দেখা। এছাড়াও এই দ্বীপ থেকেই প্রতিদিন গভীর সমূদ্রে মাছেদের দেশে যাওয়া হয়। যেখানে নানান রংয়ের ছোটবড় মাছের সাথে দেখা হয় এবং ছবি তোলা যায়। শুধু তাই নয়। সাবমেরিনে যেতে হলেও এই দ্বীপ থেকে যেতে হয়। সুইমিং ও প্যারাসুটিং করা যায় এই দ্বীপে। তাই সবমিলিয়ে মাফুসি আইল্যান্ডকে ট্যানজিট বীচ বলা যায়।

বিললিখিলি আইল্যান্ড : রাজধানী মালে শহরের পশ্চিম দক্ষিণ কর্নারে অবস্থিত বিললিখিলি আইল্যান্ড। মালে শহরের বিললিখিলি পোর্ট থেকে বোর্ডে ৩ রুপি দিয়ে টিকিট কেটে যাওয়া যায় এই দ্বীপে। যেতে সময় লাগে ২০ থেকে ২৫ মিনিট। এই দ্বীপের চারিপাশ একটা চক্কর দিতে পারবেন ৩০ থেকে ৪০ মিনিটে। সেখানতার বিকেলের সৌন্দর্য আপনাকে বাড় বাড় যেতে ডাকবে। বিশেষ করে সমূদ্র পৃষ্ঠ থেকে উচু বাদ আর পাকা সু্বিশাল প্রশস্ত যায়গা হাটতেই মন চাবে। সেই সাথে ঢেউ আছড়ে পড়ার শব্দ আপনাকে বাড়তি অনুভুতি দিবে।

স্বচ্ছ পরিস্কার পানি: এখানকার বীচে যখন হাটতে বের হবেন। তখন স্বচছ পানির স্থর ভেদ করে কয়েকফুট নিচেও সাগরের বালি কনা দেখতে পাবেন। এই দৃশ্য দেখে লোভ সামলানো দায়। আপনি চাইবেন তড়িঘড়ি করে একটু নিজেকে ভিজাতে। যেমনটা আমি আমাকে ভিজিয়ে ছিলাম। স্বচ্ছ পানির বুকে নিজেকে ভাসিয়ে দিয়ে ছিলাম। পানির নিচে ডুপ দিয়ে চোখ মেলে তাকিয়ে সাগর তলদেশের দৃশ্য অবলোকন করার চেস্টা করেছিলাম। শুধু তাই নয়। ঢেউয়ের ছল ছল এই স্বচ্ছ পরিস্কার পানির সাথে খেলায় মেতে ছিলাম।

মালদ্বীপ ভ্রমণে সাথে যা রাখবেন: স্বচ্ছ পরিস্কার নীল আকাশ থেকে আসা সূর্যের আলো আপনাকে খুব বেশী না ঘামালেও, না পোড়ালেও, বেশ ভালো জ্বালাপোড়া দিবে। মালদ্বীপের গড় তাপমাত্রা (২৪ থেকে ৩০ ডিগ্রী সে:)। তাই মালদ্বীপ ভ্রমণে অবশ্যই পাতলা পোষাক পরিধান করতে হবে। মাথায় টুপি বা ক্যাপ পড়তে হবে। আর পানির বোতল সাথে রাখতে হবে। তাহলে আপনার ভ্রমণ আনন্দদায়ক হবে।

কোথায় খাবেন: মালদ্বীপের মালে শহর ও হুলে মালে শহরে অনেক বাংলাদেশী হোটেল আছে। আপনি যেখানেই থাকেন না কেন একটু খবর নিলেই বাংলা হোটেল পাবেন। আর সেখানে প্রচুর বাংলাদেশী আছে। কথা বলে বাংলা হোটেলে খাবেন। আপনি চাহিদা অনুযায়ী ক্ষেতে পারবেন। অল্প খরচেও ক্ষেতে পারবেন। মালে শহরে ঢাকা হোটেলসহ আরো কয়েকটি হোটেল আছে। হুলে মালে শহরে আছে, মোল্লার হোটেল এবং মাফুসি আইল্যান্ডে আছে আসলামের বাংলা হোটেল। এসকল হোটেল গুলীতে ৬০-১০০ রুপি দিয়েও ক্ষেতে পারবেন। কোথায় থাকবেন: মালদ্বীপের যে কোন শহর থাকার জন্য ভালো। তবে, শহরে থাকতে চাইলে আপনি হুলে মালে অথাৎ ফেইস ওয়ান শহরে বেশিরভাগ পর্যটক থাকে। এখানে অনেক হোটেল রয়েছে। আপনি আগে বুকিং দিয়ে যেতে পারেন অথবা সেখানে গিয়ে হোটেল ভাড়া নিতে পারেন।

ভ্রমণ সঙ্গী কেমন হতে হবে: যে কোন ভ্রমণেই সঙ্গী হতে হবে মনের মতো। অথাৎ দু'জনেরই দেখার জানার ও রোদ বৃষ্টি ঝড়, কষ্ট সহ্যকরার মানুষিকতা থাকতে হবে এবং সাহসী হতে হবে। মালদ্বীপ ভ্রমণেও এর ব্যতিক্রম নয়। এখানে ভ্রমণ সঙ্গী মনের মতো না হলে আপনাকে বিপাকে পরতে হবে। কেননা, একদিকে প্রচন্ড তাপমাত্রা অপরদিকে সাগর পথই বেশি। সে ক্ষেত্রে আপনাকে রোদে হাটতে হবে। ভয়কে জয় করে সাগর পথে দ্বীপে যেতে হবে। সময় মতো ঘুম থেকে উঠতে হবে। একজনের প্রতি অন্যজনের আন্তরিকতা থাকতে হবে।

হোটেল থেকে বের হওয়ার সময় ভালো করে দেখে বুঝে চেক আউট নিতে হবে। এবং সবস্থানে নিদিষ্ট সময়ের পূর্বে অবস্থান করতে হবে। আমার মনের মতো সঙ্গী ছিলো, প্রিয় বন্ধু, কোমল মনের অধিকারী মো. নূরআলম ভূঁইয়া (আলম)। সে আমার যতেষ্ঠ কেয়ারিং করেছে। আমরা আলোচনা করে একমত হয়ে খাবার পছন্দ করতাম। অথাৎ আপনার ভ্রমণ সঙ্গী মনের মতো না হলে। ভ্রমণ আনন্দদায়ক না হয়ে বেদনা দায়ক হতে পারে।

যেভাবে যাবেন: অবশ্যই আপনার পাসপোর্ট থাকতে হবে এবং বিমানে যেতে হবে। বাংলাদেশ থেকে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স ও শ্রীলংকার ফিট এয়ারলাইন্সে মালদ্বীপ যাওয়া যায়। ইউএস বাংলা ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মালদ্বীপের ইব্রাহিম নাসির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সরাসির যাওয়া যায়। আর ফিট এয়ার লাইন্সে শ্রীলংকা যাত্রা বিরতি করে। সেখানে ৩ ঘন্টা অবস্থান করে তারপর মালদ্বীপ যায়। ভাড়া একেক সময় একেক রকম হয়। তবে, যারা মালদ্বীপ যেতে ইচ্ছুক ২৫ থেকে ৩০দিন পূর্বে টিকেট কাটলে তুলনামূলক কমে পাওয়া যাবে।

একসহস্রাধীকের বেশি দ্বীপ পুঞ্জ নিয়ে গঠিত। মালদ্বীপের রুপের নেই শেষ। একটি দ্বীপ যেন একেক রকম সুন্দর নীল আকাশ, নীল পানির সাথে মিলিত হয়ে যায় এখানে আগত পর্যটকরা। মালদ্বীপ ভ্রমণে যে কারো ভালো লাগবে। এখানকার পরিচ্ছন্নতা, মানুষের আচরণ, সৌন্দর্য আমাদের জন্য স্মরণীয় ও শিক্ষণীয় হয়ে থাকবে।
আসন্ন ঢাকসু নির্বাচনে সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন দাউদকান্দির সন্তান সুফি আহমেদ

আসন্ন ঢাকসু নির্বাচনে সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন দাউদকান্দির সন্তান সুফি আহমেদ