ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দিতে ৬ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৩, আহতদের নেই উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি টোলপ্লাজা থেকে ইলিয়টগঞ্জ পর্যন্ত মহাসড়কের ১৭ কিলোমিটার অংশে গত ছয় মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১৩ জন, আহত হয়েছেন ২১জনের অধিক। এখানে উন্নত চিকিৎসা না থাকায় অনেক ক্ষেত্রে আহত রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় অনেকের।
অথচ মহাসড়কের শহীদ নগরে ট্রমা সেন্টারটি নির্মান করা হয়েছিলো সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসার জন্য। সেটিতেও নেই পর্যাপ্ত সেবা কার্যক্রম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে, মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়ানো, নিষিদ্ধ সিএনজি, অটোরিক্সা, নছিমন, ফিটনেস বিহীন যানবাহন, দ্রুত গতির প্রতিযোগিতা, উল্টো পথে চলাচল করা যানবাহন, চালকদের মাদক সেবন, সড়ক আইন না জানা ও মানা, অদক্ষ চালকদের লাইসেন্স প্রদান ও এছাড়াও দীর্ঘ সড়ক পথে নেই দূরপাল্লার যানবাহনের চালকদের জন্য বিশ্রামাগার।
দাউদকান্দি হাইওয়ে থানা সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের গত ছয় মাসে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দির ১৭ কিলোমিটার অংশে ১৫টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে, ১৩ জন নিহত ও আহত হয়েছেন ২১ এবং এসব দুর্ঘটনায় নিয়মিত মামলা হয়েছে ১৫টি। সূত্রে আরো জানা যায়, গেল ৬ মাসে পুলিশ কর্তৃক সিএনজি, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, নসিমন, করিমন ৪৯৫টি নিষিদ্ধ যান আটক করা হয়েছে। ১২ লাখ ৩৭ হাজার ৫ শত টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স, ফিটনেস, রোড পারমিট, দ্রুত গতিতে চলমান গাড়ি সর্বমোট ৫৬৭টি গাড়ির জরিমানা মামলা দেয়া হয়েছে যার জরিমানা পরিমান প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এছাড়া মহাসড়ক থেকে ৪৫ হাজার পিস ভারতীয় নিষিদ্ধ ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়েছে। ৭ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে এবং ৪ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেয়া হয়েছে।
দাউদকান্দিতে নিরাপদ সড়ক ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী এসএম মিজান বলেন, নিরাপদ সড়ক বিষয়ে কাজ করতে গিয়ে বহু দুর্ঘটনা কাছ থেকে দেখেছি। দুর্ঘটনা রোধে চালক পথচারী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আইনের বিধান এবং নিয়ম মানা জরুরী।
স্থানীয় ভয়েজার ইংলিশ স্কুল এন্ড কলেজের প্রিন্সিপাল মোহাম্মদ সুমন সরকার বলেন, মহাসড়কে যত্রতত্র ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে তিন চাকার গাড়ি ও অতি দ্রুতগতির যানবাহনের কারণে সড়কে দূর্ঘটনা বেড়েই চলছে। সাধারণ যাত্রী ছাড়াও কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এই দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের জোড়ালো দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যেন কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করে সড়ক দূর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন।
দাউদকান্দি টোলপ্লাজা এলাকায় অবস্থিত ডিকে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুজ্জামান বলেন, প্রায় সময় মহাসড়কে দুর্ঘটনায় আহত রোগীরা হাসপাতালে আসে। আমরা তাৎক্ষণিক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রোগীকে ঢাকায় পাঠাতে হয়। ঢাকা যাওয়ার পথে অধিকাংশ রোগীর মৃত্যু ঘটে।
দাউদকান্দির হাসানপুরে অবস্থিত তাসফিন সিএনজি ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সাত্তার জানান, সড়ক নিয়ম মানছেনা চালক। সেই সাথে মাদক গ্রহন করে ড্রাইভিং সিটে বসছে। চালকদেরকে তদারকি ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষনের অভাবেই ঘটছে দুর্ঘটনা। উন্নত বিশ্বে চালকদের জন্য বিশ্রামাগার থাকলেও এই সড়কে তেমনটি নেই। সে কারনেই প্রায় সময়েই ঘটছে দুর্ঘটনা।
এ ব্যাপারে দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ওসি মো. রাশেদুল ইসলাম খান বলেন, বর্তমানে মহাসড়কের দুর্ঘটনার অন্যতম কারন যানবাহনের দ্রুতগতি। সড়কে সার্ভিন লেন না থাকায় অনেক ক্ষেত্রে দ্রুত গতির গাড়ি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা। সেজন্য আমরা সড়কে নিয়মিত স্পিডগান ব্যবহার করছি। এবং দ্রুত গতির যানবাহন শনাক্ত করে মামলা দিচ্ছি।
পিকে/এসপি
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দিতে ছয় মাসে দুর্ঘটনায় নিহত ১৩
- আপলোড সময় : ১৫-০৭-২০২৫ ০২:০৩:২৩ অপরাহ্ন
